মহাবিশ্বের পঞ্চম বল ?
২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রথম প্রকৃতির পঞ্চম বল সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ।সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করে দেখা যায় প্রকৃতির পঞ্চম মৌলিক বল থাকতে পারে। গবেষকদের একটি স্বাধীন দল দ্বারা আবিষ্কৃত একটি নতুন ধরনের বোসনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে যে এটি মহাবিশ্বের একটি নতুন শক্তিশালী ডার্ক এনার্জি অংশ হতে পারে।
ডার্ক এনার্জি অফ এক্স বোসন

1930 এর দশকের পর থেকে , পদার্থবিজ্ঞানীরা কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল প্রস্তাব করেছিল, যেখানে প্রকৃতিতে চারটি মৌলিক বলের অস্তিত্বের প্রভাব রয়েছে এমন টা বলা হয়েছিলো : মাধ্যাকর্ষণ, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম এবং শক্তিশালী ও দুর্বল নিউক্লীয় বল।( আরও জানতে আগের পোস্ট পড়ুন )
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউক্লীয়ন (নিউক্লীয় উপাদান)-গুলোকে একত্রে আবদ্ধ রাখে যে শক্তিশালী বল, তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে এবং যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্পমানের বল নিউক্লিয়াসের মধ্যে মৌলিক কণাগুলোর মধ্যে ক্রিয়া করে অনেক নিউক্লিয়াসে অস্থিতিশীলতার উদ্ভব ঘটায়, তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে । এই ব্যাপকভাবে গৃহীত তত্ত্বকে এখন "প্রোটোফোবিক(প্রোটনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করেনা) এক্স বোসন" এর সম্ভাব্য অস্তিত্ব দ্বারা চ্যালেঞ্জ করছে ।
বিষয়টি প্রথম হাঙ্গেরিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের এক দল গবেষকের নজরে আসে। Attila Krasznahorkay এর নেতৃত্বে দল, প্রোটনের সঙ্গে লিথিয়াম -৭ নিউক্লিয়াসের সংঘর্ষ ঘটিয়ে বেরিলিয়াম-৮ নিউক্লিয়াস তৈরি করেন ।
নতুন গঠিত বেরিলিয়াম নিউক্লিয়াস থেকে উচ্চ শক্তি ক্ষয়(decayed) হয়,কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিকীর্ণ শক্তি কণার অপ্রত্যাশিত অসংগতি লক্ষ করেন । দেখা যায় যে শুধুমাত্র ইলেকট্রন এবং পজিট্রন নির্গত করা ছারাও নিউক্লিয়াস একটি ভিন্ন শক্তির কণা নির্গত করেছে । পরে তার ভর মাপলে দেখা যায় এর ভর ইলেক্ট্রনের থেকে ৩৪ গুন বেশী। হাঙ্গেরির দলটি প্রথমে মনে করেছিলেন নতুন পাওয়া এই কণিকাটি হয়তো কোনো ধরনের ডার্ক ফোটন হবে। ডার্ক ম্যাটারের ক্রিয়া বহনকারী কল্পিত কণিকাকে বলা হয় ডার্ক ফোটন। তাদের গবেষণা প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক jonathan L. Feng সহ ইউসিআই এর আরেকটা টিম গবেষনা করে এর ভর ১৬.৭ meV (মেগাইলেকট্রন ভোল্ট) মেপে মত দেন যে এটা কোনো প্রোটোফোবিক X-বোসন যেটার সৃষ্টি হয়েছে নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নিউট্রনের সাথে ফোটনের সাংঘর্ষিক কাপলিং (কাপলিং মানে জোড় বদ্ধতা) এর মাধ্যমে।
Jonathan L. Feng এ প্রসঙ্গে বলেন “ উনারা দাবি করতে পারেননি যে এটি নতুন একটি মৌলিক বলের ফলে হয়েছে। তাদের মতে এই বাড়তি জিনিসটি ছিল একটি নতুন কণিকার প্রতিক্রিয়া। কিন্তু তারা নিশ্চিত ছিলেন না যে এটা কি বস্তুকণা (matter particle) ছিল নাকি বলবাহীকণা (force-carrying) ছিল। ”
আরেক গবেষক টিমোথি টেইট বলেন, "এর আগে এরকম বৈশিষ্ট্যধারী কোনো বোসন কণিকা পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি। একে আমরা কখনো কখনো এক্স বোসন বলে থাকি, যেখানে এক্স অর্থ হলো অজানা।"
কাল্পনিক নতুন এই বোসনকে আপাতত বলা হচ্ছে প্রোটোফোবিক এক্স। এর বিস্ময়কর দিক হলো, এটি শুধু ইলেকট্রন এবং নিউট্রনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাও খুবই স্বল্প পাল্লায়, যার ফলে একে শনাক্ত করা খুবই কঠিন ছিল। তবুও ইউসিআই এর দল যখন তাদের তত্ত্বকে সংশোধন করে চলেছে এখনো । এখন পর্যন্ত, এক্স বোসন শুধুমাত্র দুটি পরীক্ষা দ্বারা শনাক্ত করা হয়েছে, তাই এটি অন্য গ্রুপ দ্বারা নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment